বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন

‘লালিমা’ চাষে কৃষক বেলালের ভাগ্য বদল

বিশেষ প্রতিবেদক:: ‘লালিমা’ বদলে দিয়েছে কৃষক বেলাল হোসেনের ভাগ্য। সারা বছর অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি এবার নতুন বীজ রোপণ করেছেন। ফলন ভালো দামেও ভালো। এরই মধ্যে ২ লাখ টাকার ‘লালিমা’ বিক্রি হয়েছে তার।

বেলাল হোসেন বলেন, লালিমার প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে- লাল বাঁধাকপি।

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়ায় বাড়ি কৃষক বেলাল হোসেনের। দুই মেয়ে আর স্ত্রীসহ ৫ জনের সংসার। নিজের জমি বলতে সামান্য। তাই অন্যের জমি নিয়ে চাষাবাদ করেন।

কৃষক বেলাল বলেন, জমিতে কাজ করি আমি, আমার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে সিনথি আখতার, বন্যা বেগম, ছেলে সিহাব আলী সহ সবাই। সময় হলে মেয়েরা বই খাতা নিয়ে কলেজে যায়। তারপর আবার জমির আইলে বাপের সাথে কাজ করে। সে কারণে আমার কামলা খরচটা কম হয়। একটার পর একটা সবজি চাষ করেন জমিতে। কখনো ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ , আলু, টমেটো, লাউ, সিম, ক্যাপসিক্যাম, মিষ্টি কুমড়াসহ বারো মাস সবজির চাষ করে প্রতিবছর অন্তত বাড়তি ২ লাখ টাকা ঘরে তোলেন। লাভের টাকায় তিনি বাড়িঘর করেছেন। মেয়েদের কলেজে পড়ালেখা শেখাচ্ছেন। আর নিজের পকেট খরচ, বাজার হাট করে রাজার হালে সংসার চালিয়ে হাতে রাখেন নগদ টাকা।

ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন বীজ ভান্ডারে খোঁজ করেন ভিন্ন কিছু চাষ করা যায় কিনা। মনে মনে ভাবেন জমিতে এবার ভিন্ন কিছু চাষ করতে হবে। এবার তাক লাগিয়ে দিতে চান মানুষকে। সেই সাথে নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তারপর বীজ ভান্ডার থেকে খুঁজে পেয়েছেন লাল বাঁধাকপি ‘লালিমা’র। তার কাছেই শোনা গেলো এই বাঁধাকপির জন্ম নাকি জাপানে ।

কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আকবর হোসেন জানান, গাইবান্ধায় এর আগে কখনো লাল বাঁধাকপি দেখা যায়নি কোথাও। তারপর তিনি বীজ বপন করেন তার জমিতে । জমি থেকে চারা বড় হলে ১০ হাজার চারা বপন করেন তার দুটি জমিতে। অল্প সময়ে সারিসারি লাল বাঁধাকপি জমি জুড়ে বেড়ে ওঠে। উপরের পাতা ছিড়ে ফেললেই বের হয়ে আসে লাল টকটকে বাঁধাকপি। জমি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজের ভেতরে লাল কপি গাইবান্ধায় এই প্রথম। লাল বাঁধাকপি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন।

ভাষারপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান জানান, কৃষক বেলাল আমাদের গ্রামের গর্ব। বেলাল বারো মাসে ১৩ ফসলের আবাদ করেন। সে শুধু সবজি চাষ করেই নিজেকে কৃষক হিসাবে পরিচিতি করতে পেরেছে। লোকজনের মুখে মুখে বেলালের নাম । এ মাসের শেষ দিকে কৃষক বেলালের কপি বিক্রির উপযোগী হয়েছে। প্রতিদিন বস্তায় ভরে কপি নিয়ে যায় ভ্যানে করে। আড়তে নিয়ে যেতেই প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা হিসাবে পাইকারি বিক্রি করেন। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই জমি থেকে তুলে লালিমা বিক্রি করে অন্তত ১২শ থেকে ২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার।

কৃষক বেলাল হোসেন জানান, এই লালিমা বিক্রি করে টাকা জমিয়ে মেয়ের বিয়েতে খরচ করবেন বলে ভাবছেন ।

ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ জানান, বন্যাদুর্গত এলাকা ফুলছড়ির মাটি সোনার মতো। এই মাটিতে সোনা ফলে। তিনি বলেন, আমার জনমে আমি আর লাল বাঁধাকপি দেখিনি। আমার বাপ দাদাও দেখেনি কিন্তু আমি দেখলাম আমাদের ফুলছড়ির মাটিতে হয়েছে লাল বাঁধাকপি। কৃষক বেলাল হোসেনের মুখে শুনেছি এর নাম ‘লালিমা’ । তার সংসারের সচ্ছলতা ফিরেছে লাল বাঁধাকপি বিক্রি করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com